একটি দুর্ঘটনা, এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া-
গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় জানাযা সম্পন্ন হলো জনাব আনওয়ার হোসেন ও জনাব হরমুজ আলী সাহেবের। ২৪ জুন ভোরে সৌদি আরবে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় দুজনের। আহত হয়েছেন জনাব আব্দুল আলিম, জাকির হোসেন, সাইকুল মিয়া ও সাদেক হোসেন।
জনাব হরমুজ আলী ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জনক। সকলের কাছে একজন সৎ নম্র স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সকলের কাছেই ছিলেন একজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ত্ব। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী ও কোমল স্বভাবের ছিলেন সবার প্রিয় জনাব আনোয়ার হোসেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক। সকলে তাকে খুব সাদা মনের মানুষ হিসেবেই জানতেন। তাদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে এলাকার প্রত্যেকটা মানুষ স্থম্ভিত হয়ে যায়। দুটি পরিবারের আর্ত চিৎকারে আকাশ বিদির্ণ করে। স্বজনদের রোনাজারী আর অশ্রুসিক্ত আহাজারীতে তৈরী হয় এক করুণ নিরবতা। শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকাজুড়ে। দেশ-বিদেশে তৈরী হয় এক শোকাবহ পরিবেশ। দুজন মানুষের জন্য অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে মুনাজাত করেছেন সবাই। আল্লাহ যেনো তাদেরকে শহীদের মর্যাদা দান করে কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেন। তাদের পরিবার ও স্বজনদের যেনো ধৈর্যধারণ করার তাওফীক দান করেন। যারা আহত আছেন তাদেরকে যেনো পূর্ণ সুস্থতা দান করেন।
তাদের এ মৃত্যু আমাদেরকে আবারও জানান দিয়ে গেলো আমাদের মৃত্যু অবধারিত এবং এর কোন সময় ও বয়সসীমা নেই। যেকোন সময় যে কারো মৃত্যুর ঘন্টা বেজে ওঠতে পারে। চলে যেতে হবে পৃথিবীর সকল ভোগ-বিলাস মায়া ত্যাগ করে। ক্ষণিকের এ জীবন নিয়ে আমাদের বাহাদুরী যেনো কবরের কথা ভুলিয়ে না দেয়। যে কবরে আমাদের সহায়-সম্পত্তি ও আত্নীয় স্বজন কেউ সাথে যাবেনা। যেখানে অলোহীন এক আঁধারে হাবুডুবু খেতে হবে। যে অসহায়ত্বে কেউ সাহায্য করার সুযোগ নেই। নেক আমলই হবে একমাত্র সম্বল। পৃথিবীতে থেকে যাবে আমাদের আচার-আচরণ ও মানুষের সাথে করা ব্যবহার। ভালো কাজ করে গেলে সবাই দুআ করবে যা সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে আমাদের কবরে পৌঁছবে। অন্যদিকে মন্দকাজ করে গেলে এবং সমাজে খারাপ কিছু রেখে গেলে তা হতে পারে আমাদের কবরে আযাবের কারণ। সেজন্য আমরা সমাজের জন্য এমন কিছু করে যাওয়া উচিৎ যা আমাদের মৃত্যুর পরও সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবরে সাওয়াব পৌঁছতে পারে।
আমরা পৃথিবী থেকে চলে গেলে যেনো মানুষের ভালোবাসা ও দুআর পাত্র হতে পারি। মানুষ যেনো আমাদেরকে স্মরণ করে তাদের দুআয়। পৃথিবীতে বেচেঁ থাকার প্রত্যেকটা কাজ যেনো আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা ভাবতে পারি। কোন মানুষের হাহাকার বা আর্তনাদ যেনো আমাদের পাপকে ভারী করতে না পারে। সমাজের নেতৃত্বদানকারীদের দ্বারা যেনো কোন অসহায় সুবিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। হাশরের মাঠে কঠিন শাস্তির মুকাবেলা হবে ঐ বিচারকগন, যারা ক্ষমতা ও পেশি শক্তির বলে সমাজে অন্যায়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে কোনঠাসা করে রেখেছেন, অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আল্লাহর আদালতের কাঠগড়ায় অবশ্যই একদিন এই সমাজপতি, মোড়ল ও জনপ্রতিনিধিদের দাঁড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ প্রত্যেকেরই একদিন চলে যেতে হবে পরপারে। কোন শক্তিশালী রাজা-বাদশাহই এই পৃথিবীতে চিরদিন থাকতে পারেনি। ফেরআউন, নমরুদদের মতো মহা শক্তিশালীরাও চিরদিন থাকতে পারেনি পৃথিবীতে। আমাদের পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশির মৃত্যু আমাদেরকে বার বার মৃতুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় কিন্তু আমরা তা বেমালুম ভুলে যাই। সংশোধন হয়না আমাদের আমলের। আমরা যেনো সকল অন্যায়, অবিচার থেকে মুক্ত থাকতে পারি সময় থাকতেই সেই প্রতিজ্ঞা করে নেয়া উচিৎ। মৃত্যুর পর মানুষ যেনো আমাদের ভর্থসনা নয় দুআয় স্মরণ করে সেরকম ভালো মানুষ যেনো আমরা হতে পারি। যদি আমাদের সমাজের নেতৃত্বদানকারী সমাজপতি বা জনপ্রতিনিধিরা ভালো মানুষ হয়ে যেতে পারেন তাহলে আমাদের সমাজ হযরত উমর রা. এর সোনালী সমাজে পরিণত হয়ে যাবে। সমাজের মানুষগুলো পাবে শান্তি। একেক জন সমাজপতি বা জনপ্রতিনিধি মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকবেন চিরকাল মানুষের হৃদয়ে।
দুর্ঘটনায় মৃত্যবরণকারী দুজনসহ সম্প্রতি এলাকার আরো যারা ইন্তিকাল করেছেন বিশেষ করে মধ্য কালীকৃষ্ণপুরের আমিন মুহাম্মদের পিতা জনাব আব্দুল মানাফ, ইসলামপুরের আজিজুর রহমানের দাদা জনাব মতিউর রহমান জসু মিয়া, ডা কাউসার আহমদের পিতা জনাব মিজানুর রহমান, উত্তর ইসলামপুরের প্রবাসী মুহাম্মদ শুকুর আলীর পিতা জনাব রব মিয়া, লামা কালীকৃষ্ণপুরের জনাব গিয়াস উদ্দীন ও জনাব তাহের আলীসহ আরো যারা মৃতুবরণ করেছেন সকলকে যেনো আল্লাহ তাআলা জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমিন